somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার লিভার ঠিক আছেতো? হেপাটাটিস ভাইরাস থেকে বাচুন!!

২১ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসঃ এ ভাইরাসটি মলের মাধ্যমে ছড়ায়। মলত্যাগের পর ব্যবহৃত হাত ভালোভাবে পরিষকার না করলে মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাছাড়া দূষিত পানি এবং খাদ্যের মাধ্যমেও ছড়িয়ে থাকে। এটি ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়াতে পারে। এ ভাইরাস সাধারণত শিশু ও কিশোরদের আক্রান্ত করে না। এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় রোগীই স¤পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।


হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসঃ এ ভাইরাসটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, ব্লেড, কাঁচি, চায়ের কাপ, পানির গ্লাস, মুখের লালা, অপারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্তগ্রহণ, যৌনসংসর্গ, গভীর চুম্বনের মাধ্যমেও অন্যের দেহে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি রোগীর বুকের দুধ, গায়ের ঘাম, প্রস্রাব ও বীর্যের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এ ভাইরাসটি শিশু-কিশোরদের তুলনায় বড়দের বেশি আক্রান্ত করে। এ ভাইরাসটিকে ঘাতক ভাইরাস বললেও ভুল হবে না। কারণ এটা বেশ বিপজ্জনক এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে বছরের পর বছর ভোগাতে পারে। এমনকি শেষে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারও হতে পারে, যার ফলাফল প্রাণঘাতী।


হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসঃ এ ভাইরাসের সাথে বি ভাইরাসের মিল রয়েছে। এটিও রোগীর রক্তের মাধ্যমে বিস্তারলাভ করে। তাছাড়া যৌনসংসর্গ, রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ইত্যাদির মাধ্যমেও বিস্তারলাভ করে। বি-ভাইরাসের মতো এটাও মারাÍক। এর আক্রমণে রোগী অনেক বছর পর্যন্ত ভুগতে পারে এবং লিভারে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে শয্যাশায়ী বা মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।

এই কথাটি ভাইরাল হেপাটাইটিসের বেলায় সত্যিকার অর্থে প্রযোজ্য। কারণ এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তাই এর প্রতিরোধে আমাদের উচিৎ নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানীয় পান করা, দূষিত খাদ্য বর্জন করা। যেমন-রাস্তার পাশের বা হোটেল-রেস্তোরাঁর খোলা খাবার গ্রহণ না করা। নিজের বাসা-বাড়িতে তৈরি খাদ্যদ্রব্য যথাসম্ভব ঢেকে রাখা, খাবার আগে ও মলত্যাগ করার পর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, কাঁচি, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা, স্যালুনে যথাসম্ভব সেভ করা থেকে বিরত থাকা, ইনজেকশনের জন্য নতুন ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা, অন্যের শরীর থেকে রক্তগ্রহণের পূর্বে সেই রক্ত ভাইরাসমুক্ত কিনা নিশ্চিত হওয়া, হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত (বিশেষ করে বি ও সি) ব্যক্তির সাথে দৈহিক স¤পর্ক থেকে বিরত থাকা, কখনো হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা এবং সময়মতো হেপাটাইটিস-বি-এর টিকাগ্রহণ করা।

হেপাটাইটিস-বি এক প্রাণঘাতী ব্যাধিঃ হেপাটাইটিস ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা অর্থ লিভার বা যকৃতের প্রদাহ। এই প্রদাহ যখন হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন বলা হয় হেপাটাইটিস-বি। এই রোগটি সাধারণত যৌনমিলন, আক্রান্ত রোগীর রক্ত শরীরে গেলে, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, অশুদ্ধ পানি বা খাবারের দ্বারাও সংক্রমিত হতে পারে।

এর লক্ষণ ও উপসর্গঃ হেপাটাইটিস-বি এমন একটি রোগ যা তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করে শরীরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। যখন রোগীর লিভার বা যকৃৎ অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে-রক্ত পরীক্ষা করলে বোঝা যায় শিরায় বিলিরুবিনের মাত্রা অর্থাৎ জন্ডিস কতটা ও হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আছে কি না, অর্থাৎ এইচবিএসএজি পজিটিভ কি না। এর আগে বুকের ডান পাশে হালকা ব্যথা হতে পারে। অজীর্ণ বা বদহজমের ভাব এমনকি আলসারের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।

হেপাটাইটিস-বি-র বিপদঃ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণে লিভারের কোষগুলো তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। এ পর্যায়ে লিভারের প্রায় সব কোষই নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই বলা হয় সিরোসিস অব লিভার। তাছাড়া লিভার ক্যান্সারও এ রোগের অন্যতম প্রধান জটিলতা। অন্যান্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম আর্থ্রাইটিস ও কিডনির সমস্যা। আবার রোগের উপসর্গ প্রদর্শন না করেও এ রোগের বাহক হিসেবে কেউ কেউ অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।


প্রতিরোধের উপায়ঃ ভাইরাস হেপাটাইটিস চিকিৎসায় ওষুধের ভূমিকা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা ভিটামিন জাতীয় কিছু ওষুধ দেন, যা শরীরে কোনো ক্ষতি করে না। আবার রোগও সারায় না। তবে হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে স¤পূর্ণ বিশ্রামে রেখে ওষুধ না খাওয়ালেও রোগটি নিজে থেকেই সেরে যায়। খাওয়ার পানি যেন অবশ্যই ভালো করে ফোটানো হয় এবং টাটকাখাবার খাওয়ানো হয় । এ সময় রোগীকে ভাত, রুটি, সুজি, বার্লি, শাক-সবজি, গ্ল“কোজ, মাখনবিহীন দুধ, ছানা, চর্বিহীন মাছ খাওয়াতে হবে। এ সময় খাওয়ায় অরুচি থাকে বলে রোগীর খাদ্য সহজপাচ্য ও মুখরোচক হওয়া চাই। তবে রোগীকে বেশি করে পানি খাওয়ানো উচিৎ। শিশুদেরও বিশ্রামে রাখুন। এক্ষেত্রে শিশুর যদি রক্তের শিরায় বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি না হয় তাহলে খেলাধুলাও খেলতে দিন যদি চায়। এ রোগ হলে অন্যদেরও সাবধানে রাখুন। রোগীর ব্যবহারসামগ্রী বা বাসনপত্র আলাদা করে দিলে অন্যের সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।

হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স¤পূর্ণ আলাদা রেখে পুরোপুরি বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাদ্য, বিশেষত গ্ল“কোজ, ফলের রস ও সহজপাচ্য অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়। রোগী যদি একেবারেই খেতে না পারে, সেক্ষেত্রে স্যালাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটাতে হবে।

হেপাটাইটিস-বি এর টিকা ৪টি ডোজ নিতে হয়। প্রথম ৩টি ডোজ ১মাস পরপর এবং ৪র্থ ডোজটি প্রথম ডোজের ১২ মাস বা ১ বছর পর নিতে হয়। অর্থাৎ ০, ১, ২ ও ১২ মাস। এছাড়া আরেকভাবেও এ টিকা দেয়া যেতে পারে। ০, ১ ও ৬ মাস অর্থাৎ ১ম ডোজের ১ মাস পর ২য় ডোজ এবং ৬ মাস পর ৩য় ডোজ দিতে হবে।

(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, উইকিপিডিয়া এবং ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×